জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর: গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-ভাওয়ালগড়-পিরুজালী-মির্জাপুর) থেকে নির্বাচিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন এমন খবরে ওই আসনের সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) প্রতিমন্ত্রী হওয়ার খবরটি তার নির্বাচনি এলাকায় প্রচার হওয়ার পর রাত ১০টার দিকে বিচ্ছিন্নভাবে ঝটিকা মিছিল হয়েছে। ওই সব মিছিল থেকে টুসির প্রতিমন্ত্রী হওয়ার খবর স্লোগানের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বাবা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী নৌকা প্রতীকে জয়ী হয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি এ আসনে পাঁচবারের সাংসদ ছিলেন। এরপর এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপিকা রোমানা আলী টুসি প্রতিমন্ত্রীর ডাক পান। এ খবরে এলাকার মানুষ ও নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আহসান কবির বলেন, ‘গাজীপুর-৩ আসনটি নৌকা প্রতীকের ঘাঁটি। যে সময় সারা দেশে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে অন্য একটি দল মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেছিল। ঠিক সে সময় গাজীপুরের সব কটি আসনে নৌকার জয় হয়েছিল। তা ছাড়া সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবশেষ গাজীপুর-৩ আসনের জয়ী প্রার্থী রহমত আলী প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। টানা প্রায় ২৪ বছর এ আসনে মানুষ প্রতিমন্ত্রীও পাননি। এবার টুসির প্রতিমন্ত্রী হওয়ার খবরে আমরা বেশ উচ্ছ্বসিত। তা ছাড়া তিনি এর আগে নারী সাংসদ থাকাকালে দেশব্যাপী নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’
গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জর্জ বলেন, ‘দীর্ঘ ৫২ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অ্যাডভোকেট মো. রহমত আলী গাজীপুর-৩ আসনকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ বানিয়েছেন। তার কন্যা বাংলাদেশ কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসিকে প্রথমে সংরক্ষিত নারী সাংসদের দায়িত্ব দিয়ে যাচাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অবশেষে কর্মদক্ষতার আলোকে তাকে একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামের কৃষক জুনাইদ হাসিব বলেন, ‘এমপি তো সব এলাকাতেই থাকেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কয়টি এলাকায় থাকেন? আমরা এমপির পাশাপাশি একজন প্রতিমন্ত্রী পাচ্ছি, এটা আমাদের বড় পাওয়া। এমপি হলে এলাকাতে যে রকম উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, প্রতিমন্ত্রী হওয়াতে উন্নয়ন অনেকাংশে বেশি হবে।’
শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াছমিন বলেন, ‘যেখানে নারী নেতৃত্বের জায়গায় থাকে সেখানে নারীরা তাদের অধিকার ফিরে পায়। সর্বক্ষেত্রে নারীরা আলাদা গুরুত্ব পায়। তা ছাড়া গাজীপুর-৩ আসনে একজন নারী এই প্রথম নারী সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আবার তাকেই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া মানে সরকার আমাদের গাজীপুরের মানুষ হিসেবে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।’
শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসিকে একজন সৎ এবং শিক্ষিত নারী হিসেবে আমরা চিনেছি। বিগত ৫ বছর তিনি সংরক্ষিত নারী সাংসদ ছিলেন। তার আচরণ, কথাবার্তা, চালচলনে মার্জিত স্বভাবের পরিচয় পেয়েছি। বাবার মতো মানুষের সঙ্গে মেশার প্রবণতাও তার মধ্যে রয়েছে। এরকম একজন নারীকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পেয়ে আমরাও গর্বিত। আমরা তার কাছ থেকে ন্যায়বিচারসহ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পাবো বলে আশা রাখি।’
গৃহবধূ রিয়া নাসরিন বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে আমি বলতে পারি তার মধ্যে মানুষের মন জয় করার সক্ষমতা রয়েছে। তা ছাড়া আমি নিজেও একজন নারী। নারী হিসেবে সহজেই তার কাছে গিয়ে সব কথা খুলে বলতে পারবো। আমার মতো অন্যান্য নারীরাও এমনটি পারবে।’
উল্লেখ্য, গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-ভাওয়ালগড়-পিরুজালী-মির্জাপুর) আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪২৭ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৪৯৫ জন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ২৬ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজকে ২৪ হাজার ৫২২ ভোটে পরাজিত করেন।